নিয়ন বাতির ঝলকানিতে কী ঢাকা পড়বে সাইদুলের চোখের পানি ?
রাকিব হাসান :
উনার কষ্ট হয়তো কাউকে ছুঁয়ে যাবে না ! এ ব্যস্ত নগরীর নিয়ন বাতির ঝলকানিতে ঢাকা পড়বে সাইদুল মিয়ার চোখের পানি….
’-ও চাচা, কেমন আছেন ? মন খারাপ কেন?
-কী কমু বাবা। সব শ্যাস?
-কেন? কী হইছে?
-হেই দোহার থেইকা প্রতিদিন মাল (শাক-সব্জি) নিয়্যা আসি উত্তর বাড্ডায়। সকাল ৭ টায় আইস্যা রাইত ১ টায় বাড়িত যাই।হারাদিনে সব বেইচ্যা-কিন্যা লাব অয় মাত্র ৩-৪ শ ট্যাকা। কাইল রাইতে চালানসহ (পুঁজিসহ) ৩ হাজার টাকা আছিলো সাথে; পথে চ্যাংরা পুলাপান ধইরা ট্যাকা নিয়্যা গেছে সব। কিছু সব্জিও নিয়্যা গেছে।
-ওরা কী ছিনতাইকারী?
-হ
-মারধর করছিলো?
– বাধা দিলে ২ টা থাবর দিছে। কইছে চিল্লাইলে মাইরা ফালাইবো।’’
চাচার বয়স ৬৮।পুরো নাম মো. সাইদুল মিয়া।তার চোখে পানি চিক চিক করছে।বাম হাত দিয়ে আলতো করে মুছে নেন চোখ। বাড়ি তার সিরাজগঞ্জ। দোহার থেকে শাক-সব্জি এনে উত্তর বাড্ডা ফুজি টাওয়ারের সামনে বসে সারাদিন সব্জি বিক্রি করেন। অনেক রাতে বাড়ি ফিরেন। মেইনরোড যেপাশে মানুষ চলাচল বেশি সে পাশে বসে সব্জি বেচেন। তার কাছে বৈচিত্র্যময় (আনকমন) সব্জি পাওয়া যায়।সেকারণে অনেকেই তার নিয়মিত ক্রেতা। রোদে-পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মানুষটি রাস্তায় বসে সব্জি বেচেন। একসময় রিকশা চালাতেন। প্রতিবেশি আলেয়ার মায়ের কাছ থেকে ৫’শ টাকা ধার নিয়ে ৯ মাস আগে দিন বদলানোর আশায় তিনি সব্জি ব্যবসা শুরু করেন। পুঁজি দাঁড়ায় ৩ হাজার টাকা। এই ক্ষুদ্র চালান দিয়ে যা আয় হয় কোনোমতে ৬ জনের সংসার চলে যায়। কিন্তু হঠাৎ সেই রাতে আকস্মিক ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনায় শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন প্রায় বাকরুদ্ধ। নিজের ছেলের বয়সী কয়েকজন বখে যাওয়া সন্তানদের হাতে টাকা হারানো এবং লাঞ্চিত হওয়ার শোক তিনি কিছুতেই মানতে পারছেন না। ৩ হাজার টাকা। এ আর এমনকি ! হ্যাঁ আসলেই। ইট-পাথরের এই নগরীর প্রতি ইটের মূল্যও হতে পারে এর চেয়ে বেশি। কিন্তু বহুদূর থেকে বহুকষ্টে সব্জি বয়ে আনা এই ষাটোর্ধ মানুষটির কাছে এটাকা অনেক অ-নে-ক মূল্যবান। এরকম একজন মানুষকে মেরে তার টাকা ছিনিয়ে নেয়া আর ভিক্ষুকের থালা থেকে টাকা কেড়ে নেয়ার মধ্যে কোনো পাথর্ক্য কী আছে? স্বপ্ন ছিলো সব্জি ব্যবসা দিয়ে পরিবারের ভাগ্য ফেরাবেন । এখন তার কপালে ভাঁজ। চোখে দু:শ্চিন্তার কালোমেঘ…কারো কিছু যায় আসেনা এতে। কারণ অসভ্য এক মেট্টোপলিটন শহরে আমাদের বাস…
প্রতি/ এডি/রন